রবিবার, ১৬ মে, ২০১০

সুখী মানুষের ঢোল লাগে না

সুখী মানুষের ঢোল লাগে না
পেটাতে হয় না জনারণ্যে:
"আমি সুখী! আমি সুখী!"


সুখী মানুষের মুখে থাকে স্মিত হাসি
দৃষ্টিতে অপার মমতা তাবৎ সৃষ্টির প্রতি!




আবুধাবি : ১৫ মে ২০১০

শুক্রবার, ১৯ মার্চ, ২০১০

তুষার - পাউস্তোভস্কি

তুষার
মূল: কনস্তান্তিন পাউস্তোভস্কি
রূপান্তর: মোস্‌তাকিম রাহী
-----
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের কথা। তরুণী তাতিয়ানা পেত্রোভনা এবং তার মেয়ে ভারভারা যুদ্ধের সহিংসতা থেকে বাঁচার জন্যে অন্য অনেক শরণার্থীদের সাথে মস্কো থেকে চলে আসে ছোট একটি প্রাদেশিক শহরে। আশ্রয় নেয় বুড়ো পোতাপভের বাড়িতে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ওরা আসার মাসখানেক পরেই মারা যান পোতাপভ।

প্রথম দিকে অনুন্নত এই শহরটি পছন্দ না হলেও ধীরে ধীরে তাতিয়ানার শহরটি ভালো লাগতে শুরু করে। বিশেষ করে পুরো শহর যখন ধবল তুষারে ঢেকে যায়, তখন তাতিয়ানার খুবই ভালো লাগে। অদ্ভুত কিছু জিনিসপত্রে ঠাসা বুড়ো পোতাপভের বাড়িতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠে তাতিয়ানা। পোতাপভের একমাত্র ছেলে এখন কৃষ্ণসাগরে নৌবহরে কর্মরত। বাড়ির দেয়ালে টাঙানো ছেলেটার ছবির দিকে যখন চোখ পড়ে তাতিয়ানার, মনে হয় বহুদিন আগে এই ছেলেটার সাথে কোথাও তার দেখা হয়েছে; যখন তার অসুখী দাম্পত্যকাল শুরু হয় নি; কিন্তু সে মনে করতে পারে না ঠিক কোথায়, কোন জায়গায় দেখা হয়েছে এই যুবকের সাথে!

শনিবার, ৬ মার্চ, ২০১০

সম্রাট মারা গেছেন!

শামসুর রাহমানের স্মৃতির উদ্দেশে
----
মুমূর্ষু সুন্দরীর মুখের মতো ফ্যাকাসে, বিবর্ণ আকাশটা হাঁ করে আছে মাথার ওপর, শত্রুতায়! এই বহুবিধ ফাঁদে ভরা জঙ্গলে পথ দেখানোর মতো একটিও নক্ষত্র নেই আকাশে; শুধু একাধিক চাঁদ আকাশ দখলের লড়াইয়ে মত্ত মাথার ওপরে। জ্যোৎস্নার বদলে তারা শুধু তেজস্ক্রিয়তা ছড়ায়! এইমাত্র দেহত্যাগ করলেন জ্যোৎস্নাভুক প্রাজ্ঞ সম্রাট।

জঙ্গল পেরিয়ে সাগর, সাগরের ওপারে দুর্গম পাহাড়ি কোনো টানেলে চাপা পড়ে আছে আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি! সে-পথ জানা ছিলো শুধু সম্রাটের! সম্রাট মারা গেছেন, এখন আর খুঁজে পাওয়া যাবে না পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস আর অগাধ জ্ঞানের বিশাল ভান্ডার আলেকজান্দ্রিয়া। এই শ্বাপদসঙ্কুল জঙ্গলে আমরা ঘুরে মরছি সম্রাটের শব কাঁধে: বেরোবার পথ জানা নেই!

(১৭ অগাস্ট,২০০৬: আবুধাবি)

রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১০

মণিয়া -- অমৃতা প্রীতম


মূল: অমৃতা প্রীতম
রূপান্তর: মোস্‌তাকিম রাহী
------
সন্ধ্যা নামছে। দোরঘন্টির আওয়াজ শুনে বিদ্যা বুঝতে পারলো তার স্বামী জয়দেব কাজ থেকে ফিরেছে। দরোজা খুলে অবাক হয়ে গেলো সে। জয়দেবের সাথে অচেনা, অদ্ভুতদর্শন এক লোক দাঁড়িয়ে আছে। ময়লা উদোম শরীর, গলায় লম্বা একটা জামা পেঁচিয়ে বাঁধা। বিদ্যা কিছু না বলে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তার স্বামীর দিকে তাকালো।

জয়দেব মুচকি হেসে বউকে কিছু না বলে, লোকটার উদ্দেশে বললো, ‘ইনি হলেন, এবাড়ির কর্ত্রী। খুব ভালো মহিলা। যদি তোমার কাজকর্ম দিয়ে তাকে খুশি করতে পারো, তাহলে তোমার কপাল খুলে যাবে!’
ঘরের ভেতর ঢুকতে ঢুকতে বারান্দায় পড়ে থাকা একটা চাটাই দেখিয়ে জয়দেব লোকটাকে বললো, ‘ওটা বিছিয়ে বিশ্রাম করো, আর মুখহাত ধুয়ে নাও।’
 

শোবার ঘরের দিকে যেতে যেতে এবার বিদ্যাকে বলতে লাগলো,‘তুমি এতোদিন ধরে কাজের লোকের কথা বলছিলে, রান্নাবান্নার কাজ না জানলেও যেন সৎ হয়, এমন কেউ।’
‘তাই বলে যে-কাউকে ধরে নিয়ে আসবে? কোথায় পেয়েছো এটাকে?’ বিদ্যার কন্ঠে অসন্তোষ।

বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১০

অবহেলা

পার অবধি উপচে উঠছে কর্ণফুলির জল
ঢেউয়ের ধাক্কায় আরো একটু ক্ষয়ে গেলো
ঘাটের পাথরগুলো!
এখন সন্ধ্যা -জোয়ারের সময়,
আজ তুমি ঢেউ গুনতে আসো নি!

গত একঘন্টায় চারজন যাত্রীকে
না করেছে মনুমাঝি
আজ সে ওপারে যাবে না!

অবহেলায় কবির কিছু যায় আসে না,
কবি অভ্যস্ত
তার কোনো ক্ষতি নেই;
ক্ষতি শুধু মনুদাশের:
আজ তার বউ রুষ্ট হবে!

মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১০

মান্টো'র অণুগল্প: কামেল

মূল: সা'দত হাসান মান্টো
রূপান্তর: মোসতাকিম রাহী
........

লুটের মাল উদ্ধারের জন্যে অভিযান শুরু করেছে পুলিস। একের পর এক তল্লাশি চালাচ্ছে ঘরে ঘরে গিয়ে। লুটেরা লোকজন ভয় পেয়ে তড়িঘড়ি রাতের আঁধারে লোকচক্ষুর আড়ালে লুটের মাল বাইরে ফেলে আসতে শুরু করলো। কেউ কেউ সাথে নিজের ঘরের জিনিসও ফেলে দিয়ে আসলো পুলিসের হাত থেকে বাঁচার জন্যে; পাছে পুলিস সেগুলোও লুটের মাল বলে তাদের ধরে নিয়ে যায়!

এক লুটেরা বড় শঙ্কিত তার দুই বস্তা চিনি নিয়ে। বস্তাগুলো সে মহল্লারই মুদির দোকান থেকে লুট করেছিলো। পুরোপুরি চিন্তামুক্ত হওয়ার জন্যে সে করলো কী, খোলা জায়গায় না ফেলে মহল্লার একমাত্র কুয়োটাতে সাবধানে গিয়ে একটা বস্তা ফেলে আসলো। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত দ্বিতীয় বস্তাটি ফেলার সময় পা ফসকে সেও পড়ে গেল গভীর কুয়োটির ভেতর। চিৎকার শুনে লোকজন ছুটে এলো। তাড়াতাড়ি কুয়োর ভেতর রশি ফেলে এক যুবক নেমে পড়লো লোকটাকে উদ্ধার করতে। কুয়ো গভীর হওয়ায় লোকটাকে তুলে আনতে সময় লাগলো বেশ। উপরে তোলার পর দেখা গেল পানি গিলে ডোল হয়ে আছে তার পেট। অনেক চেষ্টা করেও তাকে বাঁচানো গেল না। পরদিন মহল্লার লোক কুয়ো থেকে পানি উঠিয়ে অবাক হয়ে গেল। কুয়োর পানি বেশ মিষ্টি!

সে-রাত থেকেই লুটেরা মৃতের কবরে দেখা গেল মোমবাতি আর আগরবাতি জ্বলছে।
.......
(দেবনাগরী লিপিতে প্রকাশিত মূল উর্দু থেকে রূপান্তরিত)

রবিবার, ২২ জুন, ২০০৮

অণুগল্প: ক্ষুধা

রাস্তার পাশের একটা ছাপড়া হোটেলের সামনে অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে চারটি ক্ষুধার্ত কুকুর। হোটেলের ভেতর থেকে কেউ রুটি কিংবা বিস্কুটের টুকরো ছুঁড়ে দেবে এই আশায় ওরা অপেক্ষা করছে সকাল থেকে । কিন্তু ভাগ্যদেবি বোধহয় আজ ওদের প্রতি খুব একটা সদয় নয়। দুপুর হতে চললো কিন্তু ওদের ভাগ্যে এখনো জোটেনি কিছুই। তারপরও তাদের ধৈর্যে কমতি নেই, 'সবুরে মেওয়া ফলে' নীতিতে বিশ্বাসী ওরা।

মেওয়া উড়ে এলো একেবারে হঠাৎ করে। হাওয়ায় ভর করে ফ্লাইং সসারের মতো একটা রুটি উড়ে এসে পড়লো ওদের মাঝখানে। মুহূর্তের মধ্যে রাগবি খেলোয়াড়দের মতো গোল হয়ে দাঁড়ালো ওরা রুটিটাকে ঘিরে। একে অপরকে মাপছে শঙ্কিত দৃষ্টিতে। চারজনেরই লক্ষ একমাত্র রুটিটার উপর।

সহসা একটা কুকুর সাহসের পরিচয় দিলো। বাকি তিন কুকুরের অস্তিত্ত্ব পুরোপুরি উপেক্ষা করে ঝাঁপ দিলো রুটি লক্ষ করে। কিন্তু ততোক্ষণে অন্য কুকুরদের মধ্যে একতা চলে এসেছে : তিন কুকুর একসাথে ঝাঁপিয়ে পড়লো হানাদার কুকুরটার উপর। এই যৌথ আক্রমণ সহ্য করতে পরলো না কুকুরটা। কুঁইকুঁই করে নিজেকে প্রতিযোগিতা থেকে প্রত্যাহার করে নিলো সে।

এখন লড়াই তিন কুকুরের মধ্যে। একটা কালো,দ্বিতীয়টা লাল এবং তৃতীয়টা সাদাকালোর মিশেল। তিন কুকুরই লোভী দৃষ্টিতে চেয়ে আছে রুটিটার দিকে। কিছুক্ষণ আগের সেই একতাভাব এখন উদাও। পেটে ক্ষুধা,চোখের সামনে খাবার; ধৈর্যের লাগাম বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পরলো না কালো কুকুরটা। আস্তেআস্তে অগ্রসর হতে শুরু করলো সে রুটির দিকে। কিন্তু বাকি দুই কুকুর টের পেয়ে গেছে তার মতলব। দু’জনের মধ্যে আবারো সঞ্চারিত হলো মৈত্রীভাবঃ ফলাফল - কেলে আউট ।

এখন প্রতিযোগী মাত্র দুজন। এই দু’জনের যে-কোনো একজনের ভাগ্যে জুটবে রুটিটা । গরর-গরর আওয়াজ করছে দুটোই। একে অপরের শক্তি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চাইছে লাফ দেওয়ার আগে। এবার সাদাকালো কুকুরটিই লাফ দিলো সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে। লড়াই চললো বেশ কিছুক্ষণ। কামড়াকামড়িতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে শেষ পর্যন্ত ধরাশায়ী হলো লাল কুকুরটা।

খুশিতে আকাশের দিকে মুখ তুলে বিকট এক চিৎকার দিলো সাদাকালো। তারপর রাজকীয় ভঙ্গিতে হেলেদুলে এগিয়ে গেলো রুটির দিকে। মুখ নামিয়ে রুটিটা তুলে নিতে যাবে,এমন সময় কোথা থেকে সাঁই করে উড়ে এলো একটা কাক। সাদাকালো কুকুরটা কিছু বুঝে ওঠার আগেই রুটিটা ঠোঁটে তুলে উড়াল দিলো কাকটা। কিংকর্তব্যবিমূঢ় যুদ্ধজয়ী কুকুরটা অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো উড়ে যাওয়া কাকটির গমনপথের দিকে।
...................

বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন, ২০০৮

রামসিংহের ট্রেনিং

মূল: হরিশংকর পরসাঈ
রূপান্তর: মোসতাকিম রাহী
.................
হিন্দি সাহিত্যের জনপ্রিয় রম্যলেখক 'হরিশংকর পরসাঈ' এর 'রামসিং কি ট্রেনিং' গল্পটি মূল হিন্দি থেকে বাংলায় রূপান্তর করেছিলাম 'রামসিংহের ট্রেনিং' নামে। প্রকাশিত হয়েছিলো দৈনিক সমকালের সাহিত্যসাময়িকী 'কালের খেয়া'তে।
.................
প্রতিদিন সন্ধ্যায় রামসিংহ আমার কাছে আসে। মুখোমুখি বসে ঘন্টাখানেক গালিগালাজ করে ফিরে যায়।
পড়শিরা হতবাক ওর এই কান্ডে। আমাকে জিজ্ঞেস করে, ‘ লোকটা কি পাগল হয়ে গেল নাকি?’
‘না,’ উত্তর দেই আমি।
তখন তারা আমাকে পরামর্শ দেয় রামসিংহকে ধরে কষে একটা ধোলাই দেওয়ার জন্যে, আর তাতে যদি আমার আপত্তি থাকে, তাহলে ব্যাপারটা যেন তাদের ওপর ছেড়ে দেই --প্রতিবেশীর দায়িত্ত্ব হিসেবে এই মহৎ কাজটি তারা সানন্দেই করবে।
কোনো জবাব না দিয়ে আমি হাসি।
তখন তারা মনে মনে আমাকে পাগল না কি কাপুরুষ ভাববে সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করে।

বুধবার, ১৮ জুন, ২০০৮

কিছুই যাবে না ফেলা

কিছুই যাবে না ফেলা!
স্বল্প আদর-অল্প উষ্ণতা-একটু অবহেলা।

ঘোমটা ঢাকা একফালি চাঁদ
ভালোবাসার এই রঙিন ফাঁদ
গোলাপ-বেলির মালা
যাবে না কিছুই ফেলা!

অতি অবুঝ দু'টি পাগল
ভাঙতে চায় যে সব অর্গল
ভেজা-উষ্ণ-লবণ-ঘামে
সোনার তনু সোনার দামে
কেনা হবে আজকে রাতে, নয়কো হেলাফেলা!
যাবে না কিছুই ফেলা!

দু'জন কাঙাল প্রেমের সাধে
খুব নীরবে খুব যে কাঁদে
লোনা জলে একপলকে নদী কীর্তনখোলা!
কিছুই যাবে না ফেলা!

সোমবার, ১৬ জুন, ২০০৮

বিষণ্ণতায় কাটে সারাবেলা

মন খুব খারাপ ছিলো গতকাল, তাই দাঁড়াই নি সম্মুখে তোমার; পাছে তোমারও মনটা খারাপ হয়ে যায়--এই ভেবে। জমানো একবুক কথা ছিলো গতকাল,তবুও ফিরে এসেছি তোমার দরোজা থেকে, যদি গিয়ে দেখি, গাঢ় রূপমাখা মুখটি ভারী হয়ে আছে প্রচন্ড অভিমানে, সেই ভয়ে। 

কারো কাছে যাই নি গতকাল, এমনকি তাদের কাছেও না--বৈকালিক আড্ডায় যারা সুখ আর দুঃখ ভাগাভাগি করে আমার সাথে, সেইসব বন্ধুদের কাছেও। নিঃসঙ্গ থেকেছি পুরোটা বিকেল: একা-একা হেঁটেছি নদীর ধারে, নির্লিপ্ত হয়ে দেখেছি কাকের উৎসব: কতো আনন্দে জলে ভেসে যাওয়া মড়া ঠুকরে খাচ্ছে ওরা; এঞ্জিনের অভাবে প্রাণান্তকর শ্রমে দাঁড় টেনে যাচ্ছে এক বৃদ্ধ মাঝি। বড়ো স্টিমার যখন তার পাশ দিয়ে যায় ঢেউয়ের দোলায় জলের ছিটে এসে লাগে তার মুখে--এসব দেখেছি। 

তারপর, সন্ধ্যার আঁধার যখন একসময় ঘন হয়ে এলো, একবার ইচ্ছে হলো ফিরে যাই তোমার কাছে, গিয়ে বলি, ‘হাত দিয়ে দেখো এই বুকে, কতোটা কষ্ট লুকিয়ে আছে কাঙালের হৃদয়ে, কতোটা কষ্ট জমতে জমতে আমি আজ আপাদমস্তক কবি।’ কিন্তু ফেরা হয় না, আমার সংকীর্ণতার কারণে: কোনো এককালে এক মায়াবতী এসে ঘর বেঁধেছিলো এই কবির পুরো অস্তিত্ত্ব জুড়ে, সবটুক ভালোবাসা দিয়ে তার জড়িয়ে নিয়েছিলো এই যুবককে। তারপর, সহসা কার ভুলে,আজও হলো না জানা, এই ব্যর্থ কবির সমগ্র চেতনা জুড়ে থাকা সেই প্রণোদিনী সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে মুখ ফেরালো চিরতরে! এখন আসা যাওয়ার পথে দৈবাৎ কখনো দেখা হয়ে গেলে, তার নির্লিপ্ত মুখ দেখে আমি হয়েযাই ‘আজনবি’! 

সেই থেকে সেই ভয়ে আর কোনো মায়াবতীর দিকে আমি হাত বাড়াইনি আজ পর্যন্ত। তাই সরল বিশ্বাসে এগিয়ে আসা তোমার কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখি সর্বদা: একজনের হিমেল অনলে পুড়ে খাক হয়ে যাওয়া এই আমি নিজেই যদি তোমাকে পোড়াতে শুরু করি! ভালোবাসা খেয়েছে আমার সবটুকু , পাছে সেই প্রতিশোধস্পৃহায় আমিও যদি তোমাকে লুপ্ত করে ফেলি! কবিরা ভালোবাসার কথা বলে, কিন্তু ভালোবাসতে জানে না! কবিরা আজীবন ঠকতে ঠকতে--আজনম কষ্ট পেতে পেতে, সর্বস্ব খুইয়ে তারপর কবি হয়! ভালোবাসতে জানে না বলেই কবিরা সব হারায়! মন খুব খারাপ থাকে আজকাল, বিষণ্ণতায় কাটে সারাবেলা --তাই বারবার ফিরে আসি তোমার দুয়ার থেকে।