মন খুব খারাপ ছিলো গতকাল, তাই দাঁড়াই নি সম্মুখে তোমার; পাছে তোমারও মনটা খারাপ হয়ে যায়--এই ভেবে। জমানো একবুক কথা ছিলো গতকাল,তবুও ফিরে এসেছি তোমার দরোজা থেকে, যদি গিয়ে দেখি, গাঢ় রূপমাখা মুখটি ভারী হয়ে আছে প্রচন্ড অভিমানে, সেই ভয়ে।
কারো কাছে যাই নি গতকাল, এমনকি তাদের কাছেও না--বৈকালিক আড্ডায় যারা সুখ আর দুঃখ ভাগাভাগি করে আমার সাথে, সেইসব বন্ধুদের কাছেও। নিঃসঙ্গ থেকেছি পুরোটা বিকেল: একা-একা হেঁটেছি নদীর ধারে, নির্লিপ্ত হয়ে দেখেছি কাকের উৎসব: কতো আনন্দে জলে ভেসে যাওয়া মড়া ঠুকরে খাচ্ছে ওরা; এঞ্জিনের অভাবে প্রাণান্তকর শ্রমে দাঁড় টেনে যাচ্ছে এক বৃদ্ধ মাঝি। বড়ো স্টিমার যখন তার পাশ দিয়ে যায় ঢেউয়ের দোলায় জলের ছিটে এসে লাগে তার মুখে--এসব দেখেছি।
তারপর, সন্ধ্যার আঁধার যখন একসময় ঘন হয়ে এলো, একবার ইচ্ছে হলো ফিরে যাই তোমার কাছে, গিয়ে বলি, ‘হাত দিয়ে দেখো এই বুকে, কতোটা কষ্ট লুকিয়ে আছে কাঙালের হৃদয়ে, কতোটা কষ্ট জমতে জমতে আমি আজ আপাদমস্তক কবি।’ কিন্তু ফেরা হয় না, আমার সংকীর্ণতার কারণে: কোনো এককালে এক মায়াবতী এসে ঘর বেঁধেছিলো এই কবির পুরো অস্তিত্ত্ব জুড়ে, সবটুক ভালোবাসা দিয়ে তার জড়িয়ে নিয়েছিলো এই যুবককে। তারপর, সহসা কার ভুলে,আজও হলো না জানা, এই ব্যর্থ কবির সমগ্র চেতনা জুড়ে থাকা সেই প্রণোদিনী সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে মুখ ফেরালো চিরতরে! এখন আসা যাওয়ার পথে দৈবাৎ কখনো দেখা হয়ে গেলে, তার নির্লিপ্ত মুখ দেখে আমি হয়েযাই ‘আজনবি’!
সেই থেকে সেই ভয়ে আর কোনো মায়াবতীর দিকে আমি হাত বাড়াইনি আজ পর্যন্ত। তাই সরল বিশ্বাসে এগিয়ে আসা তোমার কাছ থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখি সর্বদা: একজনের হিমেল অনলে পুড়ে খাক হয়ে যাওয়া এই আমি নিজেই যদি তোমাকে পোড়াতে শুরু করি! ভালোবাসা খেয়েছে আমার সবটুকু , পাছে সেই প্রতিশোধস্পৃহায় আমিও যদি তোমাকে লুপ্ত করে ফেলি! কবিরা ভালোবাসার কথা বলে, কিন্তু ভালোবাসতে জানে না! কবিরা আজীবন ঠকতে ঠকতে--আজনম কষ্ট পেতে পেতে, সর্বস্ব খুইয়ে তারপর কবি হয়! ভালোবাসতে জানে না বলেই কবিরা সব হারায়! মন খুব খারাপ থাকে আজকাল, বিষণ্ণতায় কাটে সারাবেলা --তাই বারবার ফিরে আসি তোমার দুয়ার থেকে।